সপ্তদ্বীপ -: হিন্দু ধর্মগ্রন্থ পুরাণ অনুসারে এই মহাবিশ্ব সাতটি দ্বীপে বিভক্ত, যাকে সপ্ত- দ্বিপ ( সাতটি দ্বীপ) বলা হয়।
সপ্তদ্বীপের নাম হলো -: (১) জম্বুদ্বীপ, (২) প্লক্ষ দ্বীপ, (৩) শাল্মলি দ্বীপ, (৪) কুশ দ্বীপ, (৫) ক্রৌঞ্চ দ্বীপ, (৬) শাক দ্বীপ,(৭) পুস্কর দ্বীপ।
আমাদের নাম মানুষ ( মানব ) হলো কেন-: মনুর সন্তানরা মানব (মানুষ) নামে পরিচিত, আর আমরা মনুর সন্তান অর্থাৎ বংশধর তাই আমাদের নাম মানুষ।
সপ্তদ্বীপের রাজা ছিলেন কারা -: এই মহাবিশ্বের রাজাধিরাজ ছিলেন মনুর পুত্র প্রিয়ব্রত। প্রিয়ব্রত তাহার সাতজন পুত্রকে সপ্তদ্বীপের একটি করে দ্বীপের এক এক জনকে একটি করে দ্বীপের ভার দেন বা রাজা করেন যথাক্রমে
(১) জম্বুদ্বীপের রাজা অগ্ৰিধ্র (২) প্লক্ষদ্বীপের রাজা ছিলেন মেধাতিথি, (৩) শাল্মালী দ্বীপের রাজা ছিলেন বসু, (৪) কুশ দ্বীপের রাজা ছিলেন জ্যোতিস্মাণ, (৫) ক্রৌঞ্চ দ্বীপের রাজা ছিলেন দ্যুতিমান, (৬) শাক দ্বীপের রাজা ছিলেন হব্য, (৭) পুস্কর দ্বীপের রাজা ছিলেন সজল,
(১) জম্বুদ্বীপ -: সাতটি দ্বীপের মধ্যে হলো জম্বুদ্বীপ উল্লেখযোগ্য। হিন্দু পুরাণ মতে জম্বুদ্বীপ নাম হয়েছে জাম্বু বৃক্ষ বা গোলাপ জামের বৃক্ষ থেকে।যা এই দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।এর কেন্দ্রে মেরু- পর্বত অবস্থিত যা পর্বতরাজ নামে পরিচিত। দক্ষিণে সমুদ্র দ্বারা পরিবেষ্টিত, জম্বুদ্বীপ বারোটা ভাগে বিভক্ত,এর মধ্যে আটটি অংশ মানব বসতির জন্য এবং চারটি অংশ দেবতা ও ঋষিদের জন্য নির্দিষ্ট। এটি বর্তমানে ভারতের প্রতিরূপ এবং জম্বুদ্বীপের অন্যতম প্রধান বিভাগ,এখনে মানুষের জীবন ধারা বৈচিত্র্যময়,ধর্ম এবং সংস্কৃতি বিদ্যমান।
জম্বুদ্বীপের প্রধান নদীসমূহ -: গঙ্গা, যমুনা, সরস্বতী এবং সিন্ধু। এই নদীগুলো পৃথিবী ও জীবজগতের উদ্ভবের কেন্দ্রবিন্দু বলে প্রচলিত।
পর্বতমালা -: হিমালয়, বিন্ধ্য,সাতপুরা,বিশেষত মরু পর্বত জম্বুদ্বীপের সবচেয়ে পবিত্র স্থান। হিমালয় স্বর্গের সংযোগকারী এবং দেব দেবীর বাসস্থান হিসেবে বিবেচিত ।
জনসংখ্যা ও জীবিকা -: এখানে প্রধান জীবিকা কৃষি, বানিজ্য এবং শিল্পকর্ম, জনসংখ্যা বৈচিত্র্যময়।
(২) প্লক্ষ দ্বীপ -: প্লক্ষ বৃক্ষ থেকে নাম হয়েছে প্লক্ষদ্বীপ । প্লক্ষ বৃক্ষ এই দ্বীপে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। জম্বুদ্বীপ থেকে বেশ আলাদা, এটি তুলনামূলক ভাবে ছোট, এবং হ্রদ, নদী এবং বনভূমিতে সমৃদ্ধ। যা এখানকার মানুষের জীবিকা নির্বাহের সাহায্য করে।
প্রকৃতিক সম্পদ-: এই দ্বীপে প্লক্ষ বৃক্ষ ছাড়া বিভিন্ন ধরনের প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গাছ এবং ফলমূলে সমৃদ্ধ।
বাস্তুতন্ত্র+: এখনকার মানুষ প্রকৃতির প্রতি গভীর ভক্তি করে।বৃক্ষ ও প্রকৃতির পূজারী এবং ধর্ম প্রচলিত আছে।
জনসংখ্যা -: জনসংখ্যা কম এবং গ্ৰামীন ভাবে জীবনযাপন করেন।
(৩) শাল্মালী দ্বীপ -: শাল্মালীদ্বীপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর , এখানকার মানুষ বৃক্ষ ও বনভূমির উপর নির্ভরশীল। এখানে বিভিন্ন ধরনের পাখি, জীবজন্তু এবং ঔষধি গাছপালা পাওয়া যায়, যা দ্বীপটির প্রাকৃতিক পরিবেশকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে।শাল্মালী দ্বীপের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো বিভিন্ন প্রকার ঔষধি গাছপালা
(৪) কুশ দ্বীপ -: এই দ্বীপে বিভিন্ন ধরনের ঘাস এবং ছোট ছোট গাছপালা দ্বারা সমৃদ্ধ।কুশ নামক ঘাসের নাম থেকে এই দ্বীপে নাম হয়েছে কুশ দ্বীপ।এই দ্বীপের মানুষ মূলত কৃষির উপর নির্ভরশীল,তাই তারা প্রাকৃতিক সম্পদকে সঠিক ভাবে ব্যবহার ও সংরক্ষণ করেন।কুশ দ্বীপের ঘাস এবং গাছপালা এই দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রদান করে।
(৫) ক্রৌঞ্চ দ্বীপ -: ক্রৌষ বৃক্ষের নাম অনুসারে এই দ্বীপের নাম হয়েছে কৌঞ্চ দ্বীপ। এখানে বিভিন্ন ধরনের ফলমূল এবং নানা ধরনের ঔষধি গাছপালা পাওয়া যায়।কৌঞ্চ দ্বীপের মানুষ প্রধানতঃ কৃষক এবং বৃক্ষের প্রতি তাদের গভীর ভক্তি রয়েছে।কৌঞ্চ দ্বীপের বিভিন্ন প্রকার ফলমূল ও ঔষধি গাছপালা সুদূর প্রাচীন কাল থেকে আধুনিক সমাজে আজ ও পর্যন্ত ব্যবহার হয়ে চলেছে।
(৬) শাক দ্বীপ -: শাক দ্বীপটি শাকার নামক বৃক্ষের জন্য পরিচিত।শাক দ্বীপের বাসিন্দারা মূলত মৎস্যজীবী, এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপর নির্ভর করে জীবন যাপন করে। এখনকার সৈকত,জলাশয় এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
(৭) পুস্কর দ্বীপ -: পুস্কর দ্বীপটি সর্ববৃহৎ মহাদ্বীপ যা মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং পুস্কর বৃক্ষের জন্য বিখ্যাত।এই দ্বীপটি মুনি- ঋষিদের একটি গুরুত্বপূর্ণ আধ্যাত্মিক কেন্দ্র এবং কল্পনার প্রতিফলন। এখানে বাসিন্দারা প্রকৃতির সার্থে সহাবস্থান করে এবং জীবনধারায় প্রাকৃতিক সম্পদের গুরুত্ব অত্যন্ত।পুস্কর দ্বীপের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য এবং সৌন্দর্য ,জীববিজ্ঞান এবং পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আকর্ষণ।
উপসংহার -: হিন্দু ধর্মে পুরাণে এই ৭ দ্বীপ প্রাকৃতিক পরিবেশ, আধ্যাত্মিকতা এবং সংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যের প্রতিফলন। প্রতিটি দ্বীপের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য এবং মাহাত্ম্য রয়েছে, যা প্রাচীন মুনি- ঋষিদের প্রজ্ঞা এবং কল্পনা প্রবনতার পরিচয় বহন করে। এই দ্বীপগুলি আমাদের প্রাচীন যুগের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক ভাবনার এক দৃষ্টান্ত।