বালি‌ ও সুগ্ৰীব এবং তাদের জন্ম কাহিনী।

মহাকাব্য রামায়ণে বালি এবং সুগ্ৰীব দুটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। কিস্কন্ধ্যায় রাজ্যের রাজা ছিলেন বালি। তার পত্মীর নাম তারা এবং পুত্রের নাম অঙ্গদ। বালির পিতা হলেন দেবরাজ ইন্দ্র,মাতার নাম অরুণা,সুগ্ৰীব ছোট ভাই।

বালি -: কিস্কিন্ধ্যায় রাজ্যের অতিশয় শক্তিশালী রাজা ছিলেন বালি। বালি তার পিতা ইদ্রদেবের কাজ থেকে একটি বিজয় আশীর্বাদ মালা পেয়েছিলেন ।যার গুন ছিল,যে বালির মুখোমুখি যুদ্ধে লড়বে, তার শক্তির অর্ধেক বালির মধ্যে প্রবেশ করবে অর্থাৎ বিরোধীর অর্ধেক শক্তি শক্তি বালি পেয়ে যাবে। ফলে তাঁকে কেউ পরাস্ত করতে পারবেন না।তিনি রাবণকে ও পরাজিত করে তার ঘোড়াশালে বেঁধে রেখেছিলেন। এরপর রাবণের অনেক অনুরোধে তাকে ছেড়ে দেয়। দুন্দুভি অসুরের সহিত সংগ্ৰাম ঘটিত ব্যাপারে তার ভাই সুগ্ৰীবের সহিত বিরোধ হয় এবং সুগ্ৰীবকে মেরে কিস্কিন্ধ্যা থেকে তাড়িয়ে দেয়।মতঙ্গ মুনির অভিশাপে ঋষিমূক পর্বত ছিল ,বালির জন্য বিপদের স্থান ,এখনে এলে তার মৃত্যু হবে।সুগ্ৰীবের সহিত মিত্রতা বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শ্রী রামচন্দ্র গাছের আড়ালে থেকে অন্যান্য ভাবে শরাঘাতে বালির প্রান বধ করেন। বালি মৃত্যুর পূর্বে শ্রী রামচন্দ্রকে বলেন – আমি কি অপরাধ করেছি যে তুমি লুকিয়ে থাকে আমাকে হত্যা করলে।

সুগ্ৰীব-: সুগ্ৰীব হলেন সূর্যদেবের পুত্র, মায়ের নাম অরুণা, স্ত্রী নাম রুমা এবং কিস্কিন্ধ্যার রাজা বালির ভাই। বালি ও সুগ্ৰীবের ভালো সম্পর্ক ছিলো।সুগ্ৰীব ছিলেন রাজসভায় খুবই জনপ্রিয়, কারণ তিনি ছিলেন সহযোগী , দায়িত্বশীল, এবং সৎ চরিত্রের। কিন্তু ভুলবোঝাবুঝির ফলে বালি তাকে তাড়িয়ে দিলে, সুগ্ৰীব ঋষিমুক পর্বতে আসে। তার কাকা হনুমানের সাহায্য নিয়ে বানর সেনা তৈরী করে ঋষিমুক পর্বতে রাজা হয়ে সুখে রাজত্ব করেন। পরবর্তী সময়ে শ্রী রামচন্দ্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব স্থাপন করে কিস্কিন্ধ্যার রাজা হয়েছিলেন।

বালি ও সুগ্ৰীবের বিচ্ছেদের কারণ -: একসময় একটি মায়াবী দুন্দুভি দৈত্য কিস্কিন্ধ্যার প্রবেশ করেন। এবং দৈত্য বালিকে যুদ্ধের জন্য আহ্বান করেন। বালি দৈত্যকে বধ করার জন্য দৈত্যের পিছনে ধাওয়া করে।বালির বাঁধা সত্বেও সুগ্ৰীব য়ায। দৈত্য ছুটে গুহায় মধ্যে প্রবেশ করে। বালি গুহায় বাইরে সুগ্ৰীবকে অপেক্ষা করতে বলে ,বালি গুহায় মধ্যে প্রবেশ করেন। বহুদিন কেটে যায়, বালি ফিরে না আসায় এবং গুহা থেকে রক্তের প্রবাহ দেখার পর,সুগ্ৰীব ভাবে তার দাদা বালি মারা গেছেন।তাই দৈত্য যাতে গুহা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারে, গুহার মুখে বড়ো পাথর দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে ফিরে আসেন। প্রজাদের অনুরোধে কিস্কিন্ধ্যার রাজ্যের রাজসিংহাসনে বসেন এবং রাজ্যের পালনের দায়িত্ব গ্ৰহণ করেন। কিছু কাল পর, বালি বেঁচে ফিরে আসেন এবং দেখেন ,সুগ্ৰীব সিংহাসনে বসে আছে। বালি ভাবেন সুগ্ৰীব তাকে প্রতারিত করেছে। বালি ক্রোধান্বিত হয়ে,সুগ্ৰীবের স্ত্রী রুমিকে নিজের কাছে রেখে সুগ্ৰীবকে মেরে কিস্কিন্ধ্যা থেকে তাড়িয়ে দেয়।

বালির ও সুগ্ৰীবের জন্ম কাহিনী -: হিন্দু ধর্মের মতে সূর্যের সারথী অরুন, তার পিতার নাম ঋষি কশ্যপ এবং মায়ের নাম বিনিতা,গরুড় তাঁর বড় ভাই । মহাকাব্য রামায়ণে অনুযায়ী অরুনের বিবাহ হয় ন্যেনী এর সার্থে। তাদের দুই পুত্র জটায়ু এবং সম্পতি।অরুন একবার অরুনা নামে নারী রূপ ধারণ করে,অস্পরা (স্বর্গীয় জলপরী) দের সভায় প্রবেশ করেছিলেন। এই সভায় ইন্দ্রদেব অরুনার প্রেমে পড়েন এবং তাদের মিলনের ফলে বালির জন্ম হয়। পরবর্তী সময়ে সূর্যদেব আর অরুনার মিলনের সুগ্ৰীবরের জন্ম হয়।মা ঈঙ্গল তাই বালির ও সুগ্ৰীপের রূপ ঈঙ্গলের নেয় হয়। দুই শিশু – সন্তানকে লালন পালনের জন্য ঋষি গৌতম মুনির স্ত্রী অহল্যাকে দেওয়া হয়। কিন্তু গৌতম মুনি তাদের পছন্দ করতেন না। গৌতম মুনি তাদের অভিশাপ দেন,যার ফলে তারা বানরের রূপ ধারণ করে।

উপসংহার -: ভুল বোঝাবুঝি এবং কূটকৌশল বৃহত্তর সমস্যার সৃষ্টি করে। ভগবান সর্বদা ন্যায়ের পক্ষে, অপরাধীর বিনাশ করে , ধর্ম এবং ন্যায়ের প্রতিষ্ঠা করেন।।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top