হিন্দু ধর্মে পেঁয়াজ ও রসুন আমিস কেন? উৎপত্তি ও পৌরাণিক কাহিনী।

হিন্দু ধর্মে ব্যাপক প্রচলিত ধারণা আছে – পেঁয়াজ ও রসুন আমিস বা তামসিক খাবার। কিন্তু প্রশ্ন হলো এগুলো তো গাছের ফল, তাহলে আমিস বা তামসিক খাবার কেন? পেঁয়াজ ও রসুনের জন্ম নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পৌরাণিক কাহিনী আছে যা সমূদ্র মন্থনের একটি অংশ।

সমুদ্র মন্থন ও অমৃত – দেবতারা ও অসুরেরা একত্রে সমুদ্র মন্থন করেন। সমুদ্র মন্থনে মন্দার পর্বতকে মন্থনদণ্ড এবং বাসুকি নাগকে রশি হিসেবে ব্যবহার করেন। এই সমুদ্র মন্থন থেকে উঠে বহু আলৌকিক বস্তু এবং অবশেষে উঠে অমৃত – যা প্রদান করে অমরত্ব ।

ভগবান বিষ্ণুর মোহিনী রূপ ধারণ -অমৃত পাওয়ার জন্য দেবতা ও অসুরদের মধ্যে আবার বিবাদ বাঁধে । অসুরদের অমৃত থেকে বঞ্চিত করতে ভগবান বিষ্ণু মোহিনী রূপ ধারণ করেন – এক অপরূপা রমনী রূপে।

অসু্রের ছলনা ,রাহু ও কেতুর উৎপত্তি – স্বর্ভানু নামে এক অসুর দেবতার ছদ্মবেশে ছল করে অমৃত পান করেন।চন্দ্র ও সূর্য এই দেবতা রূপী অসুরকে চিনে ফেলেন এবং এই ঘটনা বিষ্ণুকে বলেন। ভগবান বিষ্ণু সঙ্গে সঙ্গে সুদর্শন চক্র দিয়ে অসুর স্বর্ভানুর মাথা কেটে মাথা ও শরীর আলাদা করে দেন। ইতিমধ্যেই সে অমৃত পান করে ফেলেছিল,যার ফলে সে মরেনি।
তার মাথায় অংশের নাম হয় রাহু,আর শরীরের অংশের নাম হয় কেতু।

পেঁয়াজ ও রসুনের জন্ম ,পৌরাণিক কাহিনী – এই সমুদ্র মন্থন আখ্যান অনুযায়ী, যখন ভগবান বিষ্ণু অসুরের মাথা কাটেন তখন অসুরের দেহ থেকে অমৃত মিলিত কিছু রক্তবিন্দু মর্ত্যলোকে পড়ে। বিশ্বাস করা হয়, সেই রক্ত থেকে জন্ম হয় পেঁয়াজ ও রসুনের।

খ্যাদ্যগুন ও উপকারিতা – পেঁয়াজ ও রসুনের গন্ধ তীব্র,স্বাদ খুব ভালো,স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে খুব উপকারী, ক্ষমতা বৃদ্ধি করে রোগ প্রতিরোধ করে।

পেঁয়াজ ও রসুন কেন আমিস- পুরাণ মতে পেঁয়াজ ও রসুন অসুরের রক্ত থেকে জন্ম এবং খ্যাদ্যগুন বেশি থাকায় রজস ও তামস গুনের বাহক।এই খাদ্যদ্রব্য ইন্দ্রিয়কে উত্তেজিত ও মনকে অস্থির করতে পারে এবং আধ্যাত্মিক উন্নতির পথে বাঁধার সৃষ্টি করে। হিন্দু ধর্মে উপবাস ,পূজা ও যজ্ঞের সময় শরীর ও মনকে নির্মল ও শান্ত রাখতে সাত্ত্বিক আহার খাবার বিধান রয়েছে।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ – যেহেতু অসুরের রক্ত থেকে পেঁয়াজ ও রসুনের জন্ম তাই মনে করা হয় এগুলো অশুদ্ধ বা অমঙ্গল জনক, ঈশ্বরকে অর্পণ যোগ্য নয় এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে ও ব্যবহার করা হয় না।
বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মতে পেঁয়াজ ও রসুন রজত – তামস গুনের বাহক তাই তারা দেবতাকে নিবেদন করে না এবং গ্ৰহন ও করে না

উপসংহার – পেঁয়াজ ও রসুন স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে এগুলো খুব উপকারী হলে ও ধর্মীয় দিক থেকে এগুলো বর্জনীয় বলা হয়। তবে প্রতিটি মানুষের এগুলো গ্ৰহন ও বর্জনের নিজস্ব অধিকার রয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top