পুতনা -: পুতনা হলো একজন বিশাল চেহারার মায়ার রূপী রাক্ষসী। যার কাজ ছিল নবজাতক শিশুদের হত্যা করা। রাজা কংসের আদেশে পুতনা রাক্ষসী এক সুন্দরী যুবতীর ছদ্মবেশে স্তনে বিষ লাগিয়ে, বিষাক্ত দুধ খাইয়ে শ্রী কৃষ্ণকে হত্যা করার চেষ্টা করে। কিন্তু শিশু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার বিষাক্ত স্তন্যপানের মাধ্যমে তার ভবলীলা শেষ করে দেন এবং সে মৃত্যু বরণ করে।
কংস-: কংস অত্যাচারী,প্রজা পীড়নকারী ভোজবংশীয় রাজা। তার পিতার নাম উগ্ৰসেন মায়ের নাম পদ্মাবতী। তার জন্মের রহস্যময় ঘটনা হলো,রাক্ষসরাদ দ্রুমিল রাজা উগ্ৰসেনের ছদ্মবেশে তার পরমাসুন্দরী স্ত্রী মহারানী পদ্মাবতীকে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করার ইচ্ছে প্রকাশ করলেন ।রানী পদ্মাবতী তাকে স্বামী ভাবে এবং মিলন হয়। রাক্ষসের বীর্যে অন্তঃসত্ত্বা হলেন রানী । পুত্রসন্তানের জন্ম হলো নাম দেন কংস। রাক্ষসের ঔরসে তার জন্ম বলেই তার স্বভাব রাক্ষসের মতো। তিনি মগধের রাজা জরাসন্ধের দুই কন্যা অস্তি এবং প্রাপ্তিকে বিবাহ করেন। জরাসন্ধের সহায়তায় বৃদ্ধ পিতা রাজা উগ্ৰসেনকে বন্দি করে মথুরায় রাজা হন। কংসের বোন দেবকীর সঙ্গে বাসুদেবের বিবাহ অনুষ্ঠানে কংস দৈববাণী শুনতে পান যে
দেবকী এবং বাসুদেবের অষ্টম গর্ভের সন্তান তার মৃত্যুর কারণ হবে।তাই তিনি দেবকী এবং বাসুদেবকে কারারুদ্ধ করে রাখেন। কারাগারে থাকা কালীন কংস , দেবকীর ছয় জন সন্তানকে হত্যা করেন। ভগবানের লীলার সপ্তম সন্তান বলরাম গোকুল বাসী বাসুদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী রোহিনীর গর্ভে প্রতিস্থাপিত হয়। গোকুলে ভাদ্রমাসে পূর্নিমা তিথিতে বলরামের জন্ম হয়। ভাদ্রমাসের কৃষ্ণ অষ্টমী তিথিতে মধ্যে রাত্রে কংসের কারাগারে দেবকীর অষ্টম গর্ভের সন্তান শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়। সেই রাত্রেই নন্দরাজের স্ত্রীর গর্ভ থেকে যোগমায়া কন্যা রূপে জন্মগ্ৰহণ করেন। ভগবানের ছলনায় বাসুদেবের বাঁধা এবং কারাগারে দরজা খুলে যায়, তক্ষুনি বংশ রক্ষার জন্য বাসুদেব কৃষ্ণকে নিয়ে গোপনে নন্দরাজের ঘরে রেখে তার সদ্যজাত কন্যা যোগমায়াকে নিয়ে মথুরায় ফিরে আসেন।কংস পূর্বের ন্যায় যোগমায়াকে পাথরের উপর নিক্ষেপ করে হত্যা করার আদেশ দেন, কিন্তু যোগমায়া নিক্ষিপ্ত অবস্থায় আকাশে উঠে গিয়ে বলেন ” তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে “। এরপর কংস কৃষ্ণকে অনেক অনুসন্ধান করেন এবং হত্যা করার জন্য অনেক চেষ্টা করেন।সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায়। অবশেষে কংস যজ্ঞ করে কৌশলে কৃষ্ণকে মথুরায় আনলেন।এই অনুষ্ঠানে এসে কৃষ্ণ কংসের মল্লযোদ্ধাদের নিহত করেন। এতে কংস অত্যন্ত রেগে গিয়ে কৃষ্ণ ও বলরাম দুই ভাইকে নির্বাসনে পাঠাবার আদেশ দেন ,শুধু তাই নয় তিনি নন্দরাজকে বন্দি এবং উগ্ৰসেন ও বাসুদেবকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। এই আদেশ শোনার সঙ্গে সঙ্গে কৃষ্ণ কংসকে সিংহাসন থেকে ছুঁড়ে ফেলে বুকের উপর উঠে হত্যা করেন। তারপর কৃষ্ণ মাতামহ উগ্ৰসেনকে সিংহাসনে বসিয়ে মথুরায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন।
কংস পূর্বজন্মে কে ছিলেন -: কংস পূর্বজন্মে ছিলেন দানবপ্রধান কালনেমী। মর্তলোকে রাজা হবার কামনা করে তিনি ব্রহ্মালোকে গিয়ে ব্রহ্মার তপস্যা করেন, এবং বর পান । পরজন্মে রাজা উগ্ৰসেনের পুত্র রূপে কংস নাম ধরে মথুরাতে জন্মগ্রহণ করেন এবং মথুরায় রাজা হয়।
পুতনা রাক্ষসী পূর্ব জন্মো কে ছিলেন -: পূর্বজন্মে পুতনা রাক্ষসী ছিলেন দৈত্যরাজ বলির স্ত্রী বিন্ধ্যাবলি।
দৈত্যরাজ বলি-: দৈত্যকুলজাত বিষ্ণুভক্ত দানবীর রাজা ছিলেন বলি,গুরু শুক্রাচার্যোরের শিষ্য ।দেত্যরাজ বলির পূর্বপুরুষ প্রহ্লাদ ছিলেন মহান দাতা, তাহার পিতা বিরোচন নিজের আয়ু দেবতাদের দান করেছিলেন।দেত্যরাজ বলি স্বর্গরাজ্য জয়ের জন্য গুরুশুক্রাচায্যের আদেশে বিশ্বজিত নামক যজ্ঞ করে ব্রহ্মতেজস্বী হয়ে স্বর্গরাজ্য অধিকার করে নেয়, এবং স্বর্গরাজ্যের অধিপতি হন। এরপর তিনি মহাআনন্দে স্বর্গে শত অশ্বমেধ যজ্ঞ আরম্ভ করে।দেবগন রাজ্যচ্যুত হয়ে বিষ্ণুর শরণাপন্ন হন,ভগবান বিষ্ণু দৈত্যরাজ বলির দমন করার জন্য, মনুর স্ত্রী অদিতির গর্ভে জন্মগ্রহণ করেন নাম হয় বামন । সুদর্শন বামন বালক রূপী বিষ্ণু বলির যজ্ঞস্থলে এসে দৈতরাজ বলির কাছে কিঞ্চিত তিনপা মাপের ভূমি দান প্রার্থনা করেন।এই অতি ক্ষুদ্র দানের কথা শুনে দৈতরাজ বলি হেসে বললেন তুমি তোমার ইচ্ছামত বেশী কোন কিছু চাও। কিন্তু বামন বলে আমার অন্যকিছুর প্রয়োজন নেই, তিপাদ ভূমি পেলেই আমি খুশি,এই সময় সুদর্শন বামনকে দেখে বলির স্ত্রী বিন্ধ্যাবলির বাৎসল্য ভাব জেগে ওঠে, তিনি মুগ্ধ হয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,- আমার যদি এমন একটি ছেলে থাকতো, তাহলে তাকে কোলে নিয়ে স্তন্যপান করাতাম। দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য যোগবলে বামনদেবের অভিলাষ বুঝতে পেরে বলিকে, বামনের প্রার্থনা পূরণ করতে নিষেধ করেন। কিন্তু সত্যপরায়ণ দানবীর বলি , বামনের ইচ্ছা পূরণ করতে সম্মত হন। তখন বামন রূপী বিষ্ণুদেব ভীষণ রূপ ধারণ করে দুই পদ দ্বারা স্বর্গ মর্ত্য অবরোধ করে নাভি নির্গত তৃতীয় পদ রাখার স্থান চাহিলেন।বলেন এখন তৃতীয় পদ কোথায় রাখবো? বলি তখন নিরূপায় হয়ে মস্তক অবনত করে বললেন – ঐ চরণ আমার মস্তকে স্থাপন করুন।বামনদেব তখনই বলির মস্তকে তৃতীয় চরণ তুলে দিয়ে নাগপাশে বন্ধন করেন।তখন বিন্ধ্যার মনোভাব আবার পরিবর্তন হয়, তিনি ভাবলেন এই দুষ্ঠমতি বালকে কাছে পেলে ওকে বিষ খাঁইয়ে মারতাম। অন্তর্যামী নারায়ন বিন্ধ্যার অন্তরের কথা জানতে পারেন।বলির পিতামহ প্রহ্লাদ, ব্রহ্মা এবং বিন্ধ্যাবলি – সকলেই বলিকে মুক্ত করে দিতে বামনদেবের নির্কট প্রার্থনা করলেন। ভগবান বিষ্ণু বলিরাজকে বন্ধন মুক্ত করে পথ দেখিয়ে দিলেন।
শ্রীকৃষ্ণ পুতনার স্তনদুগ্ধ পান করে বধ করার কারণ -: দ্বাপরের সন্ধিক্ষণে নারায়ন কৃষ্ণ রূপে আবির্ভূত হয়।বিন্ধ্যার পুতনা রাক্ষসী রূপে জন্ম হয় ।পূর্বজন্মের মনস্কামনা পূরনের জন্য কৃষ্ণরূপী নারায়ন পুতনা রাক্ষসীকে স্তন পান করে বধ করেছিলেন। স্বয়ং নারায়ন তাঁকে মা বলে সম্বোধন করা এবং তার স্তনে মুখ দেওয়ার পুতনা রাক্ষসী মুক্তি লাভ করেন।
উপসংহার -: ঈশ্বর করুনাময়, সর্বদা তিনি ভক্তদের কামনা কামনা পূরণ করেন ঠিক সময় হলে, তিনি সকল ভক্তদের মনের কথা জানতে পারেন।